ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আমরা প্রতিদিনই অসংখ্য লিঙ্ক দেখি। ফেসবুক ইনবক্স, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, ইমেইল, টেলিগ্রাম চ্যানেল বা এসএমএস—প্রতিটি জায়গায়ই এমন লিঙ্ক পাঠানো হয় যা দেখতে আকর্ষণীয়, জরুরি বা বিশেষ অফারের মতো। বাস্তবে এগুলো অনেক সময় প্রতারণার ফাঁদ। একটি মাত্র ক্লিক আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একাউন্ট, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও, এমনকি আপনার লোকেশনও বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
অপরিচিত লিঙ্কের মাধ্যমে কীভাবে আক্রমণ ঘটে
১) ফিশিং আক্রমণ: প্রতারকরা নকল লগইন পেজ বানায় যা দেখতে হুবহু আসল সাইটের মতো। ...
২) ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার ইনস্টল: লিঙ্কে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে একটি ফাইল বা অ্যাপ ডাউনলোড হয়, যা ডিভাইসে ঢুকে তথ্য চুরি করতে শুরু করে। ...
৩) ড্রাইভ-বাই ডাউনলোড: শুধু ওয়েবসাইট ভিজিট করলেই ব্রাউজারের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষতিকর কোড ইনস্টল হয়ে যায়। ...
৪) স্মিশিং ও ভিশিং: এসএমএসের মাধ্যমে প্রতারণামূলক লিঙ্ক পাঠানো হয়। পরে ফোন করে ভুয়া পরিচয়ে তথ্য নেয়। ...
৫) ব্র্যান্ড ছদ্মবেশ: প্রতারকরা জনপ্রিয় কোম্পানির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ভুয়া সাইট বানায় যেমন `faceb00k.com`। ...
অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করলে কী কী ক্ষতি হতে পারে
১) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইমেইল বা ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে।
২) ফোন বা কম্পিউটার থেকে ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, কনট্যাক্ট লিস্ট, কল ইতিহাস, এসএমএস ও লোকেশন চুরি হতে পারে।
৩) মোবাইল ওয়ালেট (বিকাশ, নগদ, রকেট) বা ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।
৪) র্যানসমওয়্যার আক্রমণে পুরো ডিভাইস লক হয়ে যেতে পারে এবং মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
৫) পরিচয় চুরি করে আপনার নামে ভুয়া একাউন্ট বানানো হয়।
৬) ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করে গোপনে নজরদারি করা হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন লিঙ্কটি সন্দেহজনক
১) ওয়েবসাইট ঠিকানায় বানান ভুল, অদ্ভুত সংখ্যা বা অপ্রয়োজনীয় ড্যাশ থাকলে সেটি সন্দেহজনক।
২) শর্ট লিঙ্ক (bit.ly, tinyurl) আসল ঠিকানা লুকিয়ে রাখে।
৩) মেসেজে ভয় দেখানো বা অতিরিক্ত জরুরি চাপ তৈরি করা হলে এটি প্রতারণার ইঙ্গিত।
৪) বিনা কারণে গিফট, কুপন বা লটারি জেতার প্রতিশ্রুতি থাকলে সেটি ফাঁদ হতে পারে।
৫) শুধু HTTPS বা তালাচাবি আইকন দেখলেই নিরাপদ মনে করবেন না।
৬) অফিসিয়াল স্টোর ছাড়া অন্য জায়গা থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করতে বললে সেটি প্রতারণার চিহ্ন।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
১) অচেনা লিঙ্কে কখনও ক্লিক করবেন না।
২) সবসময় অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করুন।
৩) টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখুন।
৪) প্রতিটি সাইটে আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৫) ফোন ও কম্পিউটারের সফটওয়্যার সবসময় আপডেট রাখুন।
৬) নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
৭) সন্দেহজনক লিঙ্ক কাউকে ফরওয়ার্ড করবেন না।
ভুলে ক্লিক করলে করণীয়
১) যদি পাসওয়ার্ড বা OTP টাইপ করে থাকেন তবে দ্রুত সেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
২) ব্যাংক বা মোবাইল ওয়ালেটের তথ্য দিলে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন।
৩) ডিভাইসে অ্যান্টিভাইরাস চালিয়ে স্ক্যান করুন।
৪) সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল একাউন্টে 2FA চালু করুন।
৫) প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ বা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সাহায্য নিন।